বিয়ে বাড়ির জর্দা/ Bangladeshi biye bari (wedding style) style zarda/ jorda/jarda

037

For the English recipe plz click the link below
https://khadizaskitchen.com/2013/01/29/shahi-jordazarda/

এক সময় জর্দা বানানো টা খুবই যন্ত্রনা মনে হতো.আম্মু কে দেখতাম আর ভাবতাম এত যন্ত্রনা করে আমি জর্দা খেতে পারবো না. তাও চির ফাকিবাজ এই আমি বৈদেশে এসে অত্যাধিক কলিজা পোড়ার কারনে কোন একদিন, কোন ঝামেলা ছাড়াই বানিয়ে ফেল্লাম জর্দা.রেসিপি টা প্রথমে কয়েকটা গ্রুপে দিয়েছিলাম.পরে আমার ওয়েব সাইটে. ওরে বাবা, কিছু দিনের মধ্যে দেখি আমার রেসিপির ক্লোন হয়ে গেছে অনেকের নামে !! 😜
কারন আমার এই রেসিপিটা ঝামেলামুক্ত হলেও স্বাদে একেবারে আলহামদুলিল্লাহ বিয়ে বাড়ির সেই স্বাদ. অনেকে বানিয়ে অনেক দোয়া দিয়েছেন.

আমি কখনই আলাদা করে ভাত রান্না করে জর্দা বানাই না,তাতে আমার মনে হয় ফ্লেভার অনেকখানি ওই মাড়ের সাথে চলে যায়.
এখন অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন যে মাড় না ফেলে দিলে ঝরঝরে হবে কিভাবে?
জি না ,মাড় না ফেলেও ঝরঝরে হয়. পোলাউ কি আমরা মাড় ফেলে করি? পোলাউ কি ঝরঝরে হয় না?

অনেকে বলতে পারেন,বিয়ে বাড়ির বাবুর্চিরা তো মাড় ফেলেই করে! চুপি চুপি বলি ,তবে শুনেছি অনেক বাবুর্চিরা মাড় ফেলেন ঠিকই,কিন্তু সিক্রেট ইনগ্রিডিয়েন্ট হিসেবে আলাদা করে কিছু পাতলা মাড় (পানি বেশি দিয়ে ভাত করা হয় ঝরঝরা করার জন্য) তারা সেইভ করে রেখে দেন ,জর্দার পরের ধাপে ব্যাবহারের জন্য.

মাড় ফেলার পরও আমাদের বেশিরভাগেরি বানানো জর্দা নিয়ে যে কম্পলেইন,সেটা হলো জর্দা ঝরঝরে না আর কিছুক্ষন পরেই জর্দা শক্ত হয়ে যায়.
এর কারন হলো অতিরিক্ত চিনির ব্যাবহার. বিয়ে বাড়ির জর্দা তে কিন্তু চিনি বেশ কম ব্যাবহার করা হয় .খেয়াল করে দেখেছেন কি বিয়ে বাড়ির জর্দা কিন্তু হাল্কা মিষ্টি. খুব বেশি চিনি হলে সেটা জর্দার চাল কে শক্ত করে দেয়. তাই চিনি কম ব্যাবহার করুন.আর জর্দা তে একটু বেশি পানি ব্যাবহার হয় ,কারন চিনির কারনে চাল কিছুক্ষন পরেই শক্ত হয়ে যায়.

জর্দা তে আনারস বা কমলার রস ব্যাবহার কেন করা হয়? এই প্রশ্ন টা অনেকেই করেন. এর কারন শুধু ফ্লেভরের জন্য নয় ; আনারস , কমলার রস বা যে কোন সিট্রাস ভাত জাতীয় রান্নায় ভাত বা জর্দা ঝরঝরে করতে সাহায্য করে. প্রতিটি দানা আলাদা রাখতে সিট্রাস সাহায্য করে.

ভাত রান্নায় একটু লেবুর রস ভাত কে ধবধবে সাদা করতেও সাহায্য করে.

আমার রেসিপি তে আমি চাল,ফুড কালার আর গরম মশলা দিয়ে ,পরিমান মতো পানি দিয়ে বসিয়ে দিতাম .চাল সুসিদ্ধ হলে,অল্প পানি থাকা অবস্থায় চিনি,ঘি আর আনারস বা কমলার রস দিয়ে ঢেকে রান্না করতাম. শেষে আরেক্তু ঘি দিয়ে ছড়িয়ে নামিয়ে নিতাম. ছড়ানো পাত্রে রাখলে ১ -২ ঘন্টা পরেই একদম ঝরঝরা হয়ে যায়. কিন্তু কিছুদিন একটু রেসিপি টা চেইঞ্জ করেছি. এখন অর্ধেক ঘি আগেই চাল ফুটানোর সময় দেই,বাকি টা শেষে.

035

যাই হোক, এখন রেসিপি তে আসা যাক কি বলেন?

উপকরণ :

১ কাপ কালোজিরা বা চিনিগুড়া চাল
১ কাপ চিনি বা এর একটু বেশি (মোটা দানার চিনি,একদম ফাইন,মিহি দানার চিনির থেকে বেশি মিষ্টি, তাই স্বাদ অনুযায়ি এডজাস্ট করে নিতে হবে)
২ ১/৪ কাপ পানি
১/৪ কাপ কমলা বা আনারস এর রস
কয়েকটা এলাচ,এক টুকরো দারচিনি,তেজপাতা আর কয়েকটা লং
৩-৪ টেবিল চামচ ঘি
ফুড কালার
সামান্য এক চিমটি লবন (না দিলেও চলে)
মোরব্বা কুচি,বাদাম কুচি,মালাই,সাজানোর জন্য.

প্রনালী :

১. চাল ১ ঘন্টা ভিজিয়ে পানি ঝরিয়ে রাখুন.

২.একটা চওড়া হাড়িতে চাল,পানি ,ফুড কালার,আস্ত গরম মশলা,সামান্য এক চিমটি লবন আর দেড় থেকে ২ টেবিল চামচ ঘি দিয়ে মাঝারি আচে ঢেকে রান্না করুন. বাকি ঘি পরে ব্যাবহার করা হবে.

৩. ১০ মিনিটের মধ্যে পানি প্রায় শুকিয়ে আসবে. এর মধ্যে আর চামচ দিয়ে নাড়ানাড়ি করবেন না,তাতে জরদা আঠালো হয়ে যাবে.এখন চিনি আর আনারস বা কমলার রস দিয়ে ,বাকি ঘি দিয়ে হালকা হাতে একবার নেড়ে দিন.বেশি নাড়বেন না বা জোরে জোরে নাড়বেন না,তাতে চাল ভেংে আঠালো হয়ে আসবে.জ্বাল কমিয়ে রান্না করুন. কিছুক্ষন পর পর খেয়াল করুন,নিচে যেন পোড়া লাগে না. পানি শুকিয়ে গেলে এখন আধাঘন্টার মতো দমে রাখুন. অনেক ঝরঝরে হয়ে যাবে এই দমে রাখার ফলে.
আমি কখনো তাওয়ার উপরে দমে দেই না. আমি যেটা করি,একি মাপের আরেকটা হাড়িতে পানি দেই, ওই হাড়ির উপরে জরদার হাড়ি বসিয়ে ঢেকে দিয়ে চুলা জালিয়ে দেই. জর্দার হাড়ির মুখ বন্ধ থাকবে. পানির ভাপে সমান ভাবে সব জায়গায় তাপ লাগবে আর সুন্দর ভাবে দম হবে.

৪.একটা পাত্রে ছড়িয়ে পরিবেশন করুন. চেপে চেপে জরদা ডিস আউট করলে ওই চাপে জর্দা ভরতা ভরতা হয়ে যাবে. ঝরঝরে হবে না. ২-৩ ঘন্টা ঘন্টা পরে আরো ঝরঝরে হয়ে যাবে.
মোরব্বা,মালাই ,কাটা বাদাম ,ছোট ছোট লালমোহন দিয়ে পরিবেশন করতে পারেন.

*চিনি দেয়ার আগে চাল যদি বেশি সিদ্ধ মনে হয় ঘাবড়াবেন না. চিনি চাল শক্ত করে দেয়,এই জন্য পোলাউয়ে থেকে কিছু বেশি পানি নেয়া হয়.034

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s