মুরগির কোরমা
কোরমা রান্নাটি মুঘলদের সাথে ভারতবর্ষে প্রবেশ করে সুদূর মধ্য এশিয়া থেকে. ইরান, তুরষ্ক,আজারবাইজান,উজবেকিস্তান সহ মধ্য এশিয়ার অনেক জায়গায় কোরমা বিশেষ ভাবে জনপ্রিয়.
ভারতবর্ষে প্রবেশ করে এই রান্নায় অনেক গুলো ভেরিয়েশন এসেছে . কোরমা বলতে যা বুঝানো হয় তা হলো খুব হালকা মশলাদার কিন্তু দই , মালাই,বাদাম বাটা দিয়ে করা শানদার ,শাহি একটা গ্রেভি যুক্ত মুরগির প্রিপারেশন.
সাধারনত ইন্ডিয়া এবং পাকিস্তানে যে কোরমা করা হয় তার থেকে আমাদের বাংলাদেশি কোরমার স্বাদে,গন্ধে অনেক পার্থক্য. লাখনৌয়ি রান্নার প্রভাবযুক্ত আমাদের শাহী রান্নাগুলোর রেসিপির উৎস কিন্তু নবাবদের রসুইঘর. যার ফলে আমাদের এখানে কোরমা বলতে আমরা বুঝি ধবধবে সাদা, হালকা মিষ্টি স্বাদের, ভীষন রিফাইন্ড, শাহী একটা ব্যাপার.ইন্ডিয়া, পাকিস্তানি কোরমার মতো লাল রং এর কোরমার স্থান আমাদের রান্নায় নেই.যদিও ওখানেও সাদা কোরমা বলে একটা ভেরিয়েশন আছে,সেটাও আমাদের কোরমার মতো এত ফ্লেভরফুল নয়.
মুরগির কোরমা তে আসলে জিরা,ধনিয়ার ব্যাবহার না হলেই ভাল. হলেও তা টেলে নেয়া হয় না. বাটা মশলা আর আস্ত গরম মশলার ব্যাবহার লক্ষনীয় যেটা কোরমার ধবধবে সাদা রং বজায় রাখতে সাহায্য করে.
আমি নিজেই তিন ভাবে করি. কখনো দই দিয়ে,কখনো দুধ বা ক্রিম দিয়ে আবার কখনো দই আর ক্রিম/দুধের কম্বিনেশনে.
আজকে যেই রেসিপি শেয়ার করছি তাতে দই ব্যাবহার করিনি. আমার কাছে এই ভার্শনটাই বেশি প্রিয়.
উপকরণ :
দেড় কেজি মুরগি , ১ টা মুরগি ৬ বা ৮ টুকরো করে কাটা
১/২ কাপ +২ টেবিল চামচপিয়াজ বাটা
১ ১/২টেবিল চামচ আদা বাটা
২ চা চামচ রসুন বাটা
৬-৭ টা সবুজ,ছোট এলাচ
২ টুকরা দারচিনি
৫/৬ টা লং
২ টা ছোট তেজপাতা
১/২ চা চামচ জয়িত্রি
১/২ চা চামচ সাদা গোল মরিচ গুড়া
৮-১০ টা আস্ত কাচামরিচ
দেড় কাপ ঘন দুধ বা হেভিক্রিম+ দুধ
২ টেবিল চামচ কাঠ বাদাম বাটা বা গুড়া
২চা চামচ সোনালী কিশ্মিশ (কালো রং এর নয়) কুচানো
ঘি + তেল
লবন স্বাদ অনুযায়ি
২ চা চামচ চিনি বা স্বাদ অনুযায়ী
কেওড়া জল
প্রনালী :
১ . মুরগি ভাল করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে রাখুন.
২. তেল+ ঘি গরম করে ,তাতে আস্ত গরম মশলা দিয়ে একটু ভেজে বাটা পিয়াজ দিয়ে কশাতে থাকুন. আদা বাটা, রশুন বাটা দিন. দরকার বোধে অল্প অল্প পানি দিয়ে কষান. সাবধান,পোড়া বা রং যাতে না ধরে.মষলা ভুনা হয়ে তেল উপরে আদবে, কিন্তু মশলার কালচে রং হবে না. মশলা কড়াইয়ে লেগে গেলেই কালচে রং হয়.
৩. মুরগির টুকরা গুলো দিয়ে কষান. একি ব্যাপার, মশলা নিচে ধরে যাওয়া যাবে না. অল্প অল্প পানি দিয়ে কষানো হলে লবন আর পরিমান মতো পানি দিয়ে সিদ্ধ হবার জন্য ঢেকে রান্না করুন.
পানি এক বারে খুব বেশি দিবেন না. দরকার হলে পরে যোগ করা যায়. একেক মুরগির সিদ্ধ হবার জন্য পানির পরিমান একেক রকম. সফট বা ফার্মের মুরগি ,দেশি মুরগির থেকে তাড়াতাড়ি সিদ্ধ হয়ে যায়. সেটা বুঝেই পানি যোগ করতে হয়.তাই একবারে বেশি পানি না দেয়াই ভাল.
৪. মুরগি সিদ্ধ হয়ে (মাংস একদম খুলে খুলে যাওয়া সিদ্ধ নয়),পানি শুকিয়ে আসলে দুধ, চিনি,বাদাম বাটা, কিশ্মিশ কুচি আর আস্ত কাচামরিচ দিয়ে আরো কিছুক্ষন রান্না করুন.জয়িত্রি আর সাদা গোল মরিচ গুড়া দিন.
দুধের বদলে কেউ হেভি ক্রিম বা হেভি ক্রিম আর দুধ মিলিয়েও করতে পারেন.যারা দেশের বাইরে থাকেন ,তারা ইভ্যাপোরেটেড মিল্ক ব্যাবহার করতে পারেন.
৫. চুলা নিভিয়ে এক টেবিল চামচ ঘি আর কেওড়া জল দিয়ে ঢেকে গরম চুলার উপর রেখে দিন. বন্ধ কিন্তু গরম চুলা দমের কাজ করবে. পরিবেশন এর আগে ছাড়া বারবার ঢাকনা খুলবেন না. তাতে কেওড়ার সুন্দর গন্ধ থাকে না.
বেরেস্তা ছড়িয়ে পরিবেশন করুন.